দিনাজপুর জেলা শহর থেকে সড়ক পথে ৩৩ মাইল বা ৫২ কিলোমিটার দক্ষিন-পূর্বে জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার খালিশপুর মৌজায়। ফুলবাড়ি উপজেলা শহর থেকে স্বপ্নপুরীর দূরত্ব ১২ কিলোমিটার। দিনাজপুর থেকে ফুলবাড়ি আফতাবগঞ্জ হাট হয়ে সম্পূর্ণ পাকা রাস্তা দিয়ে এখানে পৌঁছনো যায়। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য দর্শনার্থী চিত্তবিনোদনের বা পিকনিক করার জন্য এখানে ছুটে আসেন। বিশেষ করে শীত মৌসুমে জনসমাগম ঘটে বেশি। বর্তমান চলচ্চিত্র স্পট হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেছে। ইতোমধ্যে এখানে কয়েকটি চলচিত্র চিত্রায়িত হয়েছে।
নয়ন জুড়ানো নিরিবিলি এ স্বপ্নপুরীতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পর্যটকরা এখানে আসতে শুরু করেছে। স্বপ্নপুরীতে এসে পৌঁছলে স্বাগত জানাবে স্বপ্নপুরীর গেটে দন্ডায়মান দুটি বিশাল আকৃতির পরীর প্রতিকৃতি। এ দুটি পরী তাদের দু’ডানা প্রসারিত করে ও একহাত উঁচু করে গেটের দু’পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গেট পেরিয়ে পথের দু’ধারে বিভিন্ন গাছের সমারোহ। তারপর চোখে পড়বে পথের দু’ধারে সারি সারি দেবদারু গাছ। দেবদাররু গাছের দু’পাশে নারিকেল গাছের সারি।
মনোমুগ্ধকর পরিবেশে নিস্তব্ধ রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে মনে পড়বে, সেই গানটি-“এ পথ যদি আর শেষ না হয়,তবে কেমন হতো, তুমি বল তো।”এখানে রয়েছে কৃত্রিম হ্রদ, পাহাড়, লেক, উদ্যান, বৈচিত্র্যপূর্ণ গাছগাছালি ও ফুলের সমারোহ, শিশুপার্ক, চিড়িয়াখানা, কৃত্রিম পশুপাখি, ফুলবাগিচা, ইটখোলা, কৃত্রিম ঝর্ণা, ঘোড়ার রথ, হংসরাজ সাম্পান, শালবাগান, খেলামঞ্চ, নামাজঘর। কুঞ্জ, ভাস্কর্য, ডাকবাংলো, মাটির কুটির, বাজার প্রকৃতিতে বাংলাদেশের মানচিত্র।
যেন এক মোহন-মায়াবী স্বপ্নিল ভুবন।কয়েক ভাগে বিভক্ত করা এই স্বপ্নময় জগতের পথ চলতে চলতে দেখা যায়, ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম কিংবা ঘাড়গুঁজো বসে থাকা অবসন্ন কৃষকের ভাস্কর্য। সেখানে সারিবদ্ধ চেয়ার, টুল বসানো আছে। হংসরাজ সাম্পানে চড়ে স্বচ্ছ নীল পানির লেকে হারিয়ে যাবেন কিছুণের জন্য স্বপ্নের জগতে। সাম্পানে যেতে যেতে দেখা যাবে কোথাও একাকী দাঁঁড়িয়ে আছে নারী, মাথা নিচু করে বসে আছে হতাশাগ্রস্ত যুবক অথবা ফুটে আছে বিশালকৃতি কচুপাতা। এছাড়াও রয়েছে কৃত্রিম পশু দুনিয়া।
প্রবেশ পথে দুটি ড্রাগন সাদর সম্ভাষণ জানানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছে। দেয়ালে চুন-সুরকি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বিলুপ্তপ্রায় হিংস্ দের প্রতিক প্রাণী। এরপর দু’এক পা ফেলতেই চমকে উঠবেন; সামনেই পথ জুড়ে হাঁ করা এক নর-করোটি দেখে! এই নর-করোটির মুখের ভেতর দিয়েই মূল পশু দুনিয়ার পৌঁছতে হবে। এছাড়াও এখানে রয়েছে, কৃত্রিম পাহাড় ও ঝর্ণা। ঝর্ণার পানি গড়িয়ে একটি ছোট জলাশয়ে পড়ছে।
লেকের পাশে রয়েছে ২৫০০ বর্গফুট বিস্তৃন্ন বাংলাদেশের মানচিত্র, যা ইট-সিমেন্ট দিয়ে সুন্দরভাবে প্রস্তত করা হয়েছে। এই স্বপ্নময় স্বপ্নপুরীতে ইচ্ছা করলেই দু’একদিন থাকাও যাবে। এ জন্য রয়েছে নিশিপদ্ম, নীলপরী, সন্ধ্যাতারা, রজনীগন্ধা মেঠোঘর এবং ভিআইপি কুঞ্জ নামের পাঁচটি মনোমুগ্ধকর বাংলো। অবসর যাপনের জন্য এসব বাংলোগুলো ভাড়া দেওয়া হয়।
এখানে অল্প দামে খাবারের সুব্যবস্থা আছে। স্বপ্নপুরীতে শিশুদের জন্য রয়েছে শিশুপার্ক, রয়েছে দোলনা ও চরকিতে ঘোরার ব্যবস্থা। রয়েছে ঘোড়ার ওপর চড়ে ঘোড়া চালনা, সুদৃশ্য ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে বেড়ানোর ব্যবস্থাও রয়েছে। ঘোড়ার গাড়ির উপরে রয়েছে সুদৃশ্য রঙিন ছাতা, যা চলার সঙ্গে সঙ্গে ঘুরছে। এছাড়াও রয়েছে অফিস চত্বরে কেনাকাটার জন্য বাজার, রেস্টুরেন্ট।রয়েছে রান্নার সহায়তার জন্য বিভিন্ন ধরনের ভাড়া চুলা। চেয়ার, টেবিল, হাঁড়ি-পাতিলসহ ডেকোরেশনের সব জিনিস ভাড়া পাওয়া যায় এখানে।
আছে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা।স্বপ্নপূরীর দক্ষিন কোনঘেসে চখে পড়বে সুন্দর নয়নাভিরাম,মনমুগ্ধকর একটি বাড়ি। আর এই বাড়িতেই বাস করেন স্বপ্নপূরীরর প্রতিষ্ঠাতা দেলোয়ার হোসেনের ভাতিজা দিনাজপুর ৬-আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য এমপি সিবলি সাদিক এবং তার স্ত্রী বিশিষ্ঠ কন্ঠ শিল্পি ছালমা খাতুন ।
জানা যায়, ১৯৮৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি জনপ্রিয় বংশীবাদক মোঃ দেলোয়ার হোসেন মাত্র ৭ একর ৩৮ শতাংশ জমি নিয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্বপ্নপুরীর গোড়াপত্তন করেন। বর্তমানে এর আয়াতন ৪০০ একরে
বিস্ততি লাভ করেছে। স্বপ্নপুরীর প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ দেলোয়ার হোসেনের ইচ্ছা, স্বপ্নপুরীকে বাংলাদেশের সেরা অবকাশ যাপনের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা এবং এখানে একটি পূর্ণাঙ্গ স্টুডিও নির্মাণ করার। যেন দেশ-বিদেশের আসা পর্যটকরা তা দেখে মুগ্ধ হয়।
এ পর্যন্ত স্বপ্নপুরীতে প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বলে তিনি জানান।মো. দেলোয়ার হোসেনের বলেন, ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তুলেছি এই স্বপ্নপুরী। বর্তমানে পূর্ণাঙ্গ জীবন্ত চিড়িয়াখানা, হাসপাতাল, অত্যাধুনিক চায়নিজ হোটেল, রেঁস্তোরার নির্মাণ কাজ চলছে। ভবিষ্যতে মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে সতন্ত্র স্পট, পাখির রাজ্য, মাছের রাজ্য, রেল কার, রোপ কার, মানবিক চৈতন্যের ভাস্কার্য শিল্প নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। পর্যটক ও পিকনিক পাটির নিরাপত্তার জন্য অবিলম্বে সেখানে একটি পুলিশ ফাঁড়ি বসানোর দাবি এখানে আসা
পর্যটকদের।